ঝিনাইদহ সদরের ফুরসুন্দি ইউনিয়নে রাজনৈতিক নেতাদের আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটছে একের পর এক প্রাণহানি, বাড়ি-ঘর ভাংচুর লুটপাট

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত একটি ইউনিয়ন ফুরসুন্দি। এ ইউনিয়নটিতে এক সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠনসমুহের ব্যাপক তৎপরতা ছিল। বর্তমানে তাদের আনাগোনা কমে আসলেও এলাকাটিতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আধিপত্ত বিস্তারের দ্বন্দ।
এ দ্বন্দের সূত্রপাত হয় বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে। সে সময় ফুরসুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি নেতা মিয়া ওয়াহিদুজ্জামান ও আওয়ামীলীগ নেতা এ্যাড. আব্দুল মালেক। নির্বাচনে আব্দুল মালেক পরাজিত হন।
এ নির্বাচনের পর থেকেই ইউনিয়নটি রাজনৈতিকভাবে দু’টি ভাগে বিবক্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় মারামারি, হত্যা, গুম, খুন। ইউনিয়নটির সর্বশেষ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেয় জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাধারন সম্পাদক এ্যাড. আব্দুল মালেক ও ফুরসুন্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শিকদার। এ নির্বাচনকে ঘিরে অত্র এলাকায় আওয়ামীলীগের মধ্যে শক্ত দু’টি গ্র“পের সৃষ্টি হয়। এ নির্বাচনেও এ্যাড. আব্দুল মালেক পরাজিত হন।
নির্বাচনের পর এলাকার কয়েকটি গ্রামের বাড়ি-ঘর ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। সে সময় এ্যাড. আব্দুল মালেক দাবি করেন তার সমর্থিতদের উপরেই এ অত্যাচার করা হয়েছে। এরপর থেকেই স্থানীয় আওয়ামীলীগের এ দু-নেতার মধ্যে এলাকার আধিপত্ত বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে চলে আসছে দ্বন্দ, সংঘাত।
উভয় গ্র“পের মধ্যে এলকাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের একাধিক সমর্থক এসব সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী ইউনিয়নটির টিকারী বাজারে আধিপত্ত বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে এ দু’টি গ্র“পের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আরিফ ও শাহ আলম নামের দু’জন আওয়ামীলীগ কর্মী নিহত হয়। আহত হয় আরো বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায়ও এ্যাড. আব্দুল মালেকের সমর্থিতরা নিহত হয় বলে জানা যায়।
সর্বশেষ গত ১০ ফেব্র“যারী মঙ্গলবার রাতে কুশোবাড়িয়া এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় আওয়ামীলীগ কর্মী সিরাজুল ইসলাম ওরফে রিন্টু মুন্সিকে। রিন্টু মুন্সিও আব্দুল মালেক গ্র“পের বলে তিনি দাবি করেন। অন্যান্যবারের ন্যায় এবারেও ইউনিয়নটির মিয়াকুন্ডু, জিতভবানীপুর, মাড়ন্দী, মুক্তারামপুর ও টিকারী সহ ৮/৯ টি গ্রামের শতাধীক বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। ইউনিয়নটিতে গত প্রায় একদশক ধরে এলাকায় আধিপত্তবিস্তার করাকে কেন্দ্র করে চলে আসা সংঘাতে অত্র এলাকার মানুষের জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। ঝরে গেছে একের পর এক অনেকগুলো তরতাজা জীবন।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিকদার ও এ্যাড. আব্দুল মালেকের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করার জন্যে এলাকায় সুধিজনদের নিয়ে একাধীকবার বৈঠক করা হয়েছে। তারপরেও থেমে থাকেনি তাদের মধ্যকার দ্বন্দ। একেরপর এক তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হচ্ছে লিপ্ত, পাশাপাশি রাতের আধারেও ওৎ পেতে থেকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এ দু-নেতার মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ নিরসনের জন্য জেলা পর্যায়ের নেতারা এগিয়ে এগিয়ে এসে অত্র এলাকায় শাুিন্ত প্রতিষ্ঠা করবেন এমনটিই প্রত্যাশা অত্র এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষেরা।
Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment